ওযূ কত প্রকার ও কি কি?

আমরা এখানে ওযূ কত প্রকার ও কি কি তা জানবো। এছাড়াও ওযূর নিয়্যত, ওযূর দোয়া, ওযূর ফরয, ওযূর সুন্নাত, ওযূর মোস্তাহাব, ওযূর মাকরূহ, ওযূ ভঙ্গের কারণ ও ওযূর নিয়ম সহ বিভিন্ন বিষয়গুলো জানবো।

ওযূ তিন প্রকার:
১. ফরয; যেমন নামাযের জন্য ওযূ করা।
২. ওয়াজিব; যেমন তাওয়াফ করার জন্য ওযূ করা।
৩. মোস্তাহাব; যেমন মুখস্থ ক্বোরআন তেলাওয়াতের জন্য, নিদ্রা যাওয়ার জন্য, গোসলের জন্য এবং সর্বদা ওযূর সাথে থাকার জন্য ওযূ করা।

ওযূর নিয়্যত কি?

আমরা অনেকেই ওযূর নিয়্যত জানি না। এখানে ওযূর নিয়ত কি তা দেওয়া হয়েছে। ওযূর নিয়্যত হলোঃ
نَوَيْتُ اَنْ اَتَوَ ضَّأَ لِرَفْعِ الْحَدَثِ وَاسْتِبَاحَةً لِلَّصَلَاةِ وَتَقَرُّبًا اِلٰى اللّٰهِ تَعَالٰى
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াদ্দ্বাআ লিরাফ’ইল হাদাসি ওয়াসতিবাহাতাল্‌ লিস্‌ সালাতি ওয়াতাক্বার্‌রুবান ইলাল্লাহি তা’আলা।

ওযূর দোয়া কি?

ওযূর নিয়্যত করার পর ওযূর দোয়া পড়তে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওযূর দোয়া কি? আমরা এখন ওযূর দোয়া জানবো। ওযূর দোয়া হলোঃ

بِسْمِ اللّٰهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ اللّٰهِ عَلَى دِيْنِ الْاِسْلَامِ اَلْاِسْلَامُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَاطِلٌ اَلْاِسْلَامُ نُوْرٌ وَالْكُفْرُ ظُلْمَةٌـ

ওযূর দোয়ার উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযী-ম, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি আলা দ্বী-নিল ইসলাম, আল ইসলা-মু হাক্বকুন, ওয়াল কুফ্‌রু বা-তিলুন, আল ইসলা-মু নূরুন, ওয়াল কুফ্‌রু যুলমাতুন।

ওযূর দোয়ার অর্থঃ মহান ও শ্রেষ্ঠ আল্লাহর নামে আরম্ভ। ইসলাম ধর্মের উপর কায়েম থাকার জন্য সব প্রশংসা আল্লাহর। ইসলাম সত্য, কুফর মিথ্যা। ইসলাম জ্যোতির্ময় ও কুফর, অন্ধকারময়।

ওযূর ফরয কি?

আমরা অনেকেই ওযূর ফরয কি তা জানি না। আবার জানলেও সঠিক কয়টি ফরয ও কি কি তা জানি না। এখানে ওযূর ফরয কয়টি ও কি কি তা দেওয়া হয়েছে।

ওযূর ফরয হলো চারটি। যথাঃ
১. কপালের চুল উঠার স্থান থেকে থুতনীর নিচে পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করা,
২. কনুই সহ দু'হাত ধোয়া,
৩. মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ মসেহ্‌ করা এবং
৪. পায়ের গোড়ালীসহ ধৌত করা।

ওযূর সুন্নাত কি?

এখন আমরা জানবো ওযূর সুন্নাত কি? ওযূর সুন্নাত হলোঃ
১. ওযূর নিয়ত করা,
২. ওযূর শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা,
৩. কব্জি পর্যন্ত দু'হাত তিনবার ধৌত করা,
৪. মিসওয়াক করা,
৫. কুল্লি করা,
৬. গরগরা করা,
৭. উত্তমরূপে নাক সাফ করা (রোযাদার হলে গরগরা করবেন না এবং নাকের ভিতর পানি পৌঁছাবে না),
৮. দাড়ি খেলাল করা,
৯. সমস্ত মাথা মসেহ্‌ করা,
১০. উভয় কান মসেহ্‌ করা,
১১. হাত-পায়ের আঙ্গুলসমূহের খিলাল করা,
১২. প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধৌত করা এবং
১৩. তারতীব অনুসারে ওযূ করা।

ওযূর মোস্তাহাব কি?

এখন আমরা জানবো ওযূর মোস্তাহাব কি? ওযূর মোস্তাহাব হলোঃ
১. ক্বেবলামুখী হয়ে বসে ওযূ করা,
২. ডান দিক থেকে ওযূ আরম্ভ করা,
৩. ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে নাক সাফ করা,
৪. ঘাড় মসেহ্‌ করা,
৫. প্রত্যেক অঙ্গ ভালভাবে মালিশ করা,
৬. বামহাত দ্বারা উভয় পা ধোয়া,
৭. অন্য লোকের সাহায্য ছাড়া ওযূ করা,
৮. ওযূর সময় কথা না বলা,
৯. আবশ্যক পরিমাণ পানি খরচ করা,
১০. ওযূ শেষে ক্বেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট কিছু পানি পান করা,
১১. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়া,
১২. ওযূ শেষে দুরূদ শরীফ ও কলেমা শাহাদাত পাঠ করা।

ওযূর মাকরূহ কি?

ওযূর মাকরূহ কি এ সম্পর্কে আমাদের অনেকের কোন ধারণা নেই। এ পর্যায়ে আমরা ওযূর মাকরূহ নিয়ে আলোচনা করবো। ওযূর মাকরূহ হলোঃ
১. মুখের উপর সজোরে পানি নিক্ষেপ করা। অতএব আমরা মুখের উপর সজোরে পানি নিক্ষেপ করবো না।
২. বাম হাতে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া। অতএব আমরা বাম হাতে কুলি করবো না এবং বাম হাতে নাকে পানি দেব না।
৩. তিন বারের বেশী ওযূর অঙ্গ ধৌত করা।
৪. নাপাক জায়গায় বসে ওযূ করা।
৫. ওযূর তারতীবের প্রতি খেয়াল না করা।
৬. দুনিয়াবী কোন কথা বলা।
৭. পানি অপচয় করা।

ওযূ ভঙ্গের কারণ কি?

আমাদের সকলের ওযূ ভঙ্গের কারণ কি তা জানা অত্যন্ত জরুরী। ওযূর ভঙ্গের কারণগুলো হলোঃ
১. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে মলমূত্র বা অন্য কিছু বের হলে।
২. মুখ ভরে বমি হলে।
৩. ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে।
৪. দাঁত বা মুখ থেকে রক্ত বের হয়ে থুথু পরিমাণ বা এর বেশী হলে।
৫. চিৎ বা কাত হয়ে অথবা কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।
৬. রুকু-সাজদা বিশিষ্ট নামাযে অট্টহাসি দিলে।
৭. মাতাল বা জ্ঞানহারা হলে।
৮. স্ত্রী ও পুরুষের গুপ্ত অঙ্গ একত্রিত হলে।

ওযূর নিয়ম কি?

এখন আমরা জানবো ওযূর নিয়ম কি? ওযূর নিয়ম হলোঃ
যখন ওযূ করতে হয়, তখন ওযূর দো'য়া পাঠ করে কব্জি পর্যন্ত তিনবার হাত ধৌত করবেন, আঙ্গুল খিলাল করবেন। তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে গরগরাসহ তিনবার কুলি করবেন। কুলি করার আগে মিস্‌ওয়াক করতে হয়। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা উত্তমরূপে নাক সাফ করে দু'হাতে পানি নিয়ে সম্পূর্ণ মুখমন্ডল এমনভাবে ধৌত করবেন যেন চুল গজানোর স্থান থেকে থুতনীর নিচে পর্যন্ত এবং ডান কানের লতি থেকে বাম কানের লতি পর্যন্ত কোন জায়গা অবশিষ্ট না থাকে। দাড়ি থাকলে সেটাও ধুয়ে ও খিলাল করে নিতে হবে। তবে হজ্ব বা ওমরাহর ইহরাম অবস্থায় দাঁড়ি খিলাল করবেন না। এরপর ডানহাত কনুইসহ, বামহাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করবেন। এরপর সমগ্র মাথা একবার এভাবে মসেহ্‌ করবেন যে, উভয় হাত ভিজিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলী ও শাহাদাত আঙ্গুল বাদ দিয়ে উভয় হাতের অবশিষ্ট আঙ্গুলগুলোর পরস্পর মাথা মিলিয়ে এবং এ ছয় আঙ্গুলের পেটের অগ্রভাগ মাথার উপর রেখে পিছনের দিকে ঘাড় পর্যন্ত এমনভাবে নিয়ে যাবেন যেন উভয় হাতের শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলদ্বয় এবং দু'হাতের তালু মাথা থেকে আলগা থাকে। এবার দু'হাতের তালু দ্বারা সামনের দিকে টেনে ঘাড় থেকে মাথার দু'পাশ মসেহ্‌ করবেন। তারপর শাহাদাত আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ভিতরের এবং বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের পেছনের ভাগ মসেহ্‌ করবেন। অতঃপর উভয় হাতের আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা ঘাড় মসেহ্‌ করবেন। উল্লেখ্য যে, গলা মাসেহ করা মাকরূহ। অবশেষে বাম হাত দ্বারা প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা গোড়ালির উপরিভাগ পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবেন এবং পায়ের আঙ্গুল খিলাল করবেন। ওযূ শেষ হওয়ার পর এ দো'আ পড়বেনঃ

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَ ابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ্‌'আলনী মিনাত তাওয়াবী-না ওয়াজ্‌'আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরীন।

ওযূ সম্পর্কীয় বিভিন্ন মাসায়েল

নামায, সাজদা-ই তেলাওয়াত ও নামায-ই জানাযা আদায় করা এবং ক্বোরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য ওযূ করা ফরয। বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করার জন্য ওযূ করা ওয়াজিব।

জানাবতের গোসলের পূর্বে, নাপাকি অবস্থায় পানাহার ও ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করা সুন্নত। আযান, ইক্বামত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রওযা মুবারকের যিয়ারত, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং সাফা-মারওয়া সা'ঈ করার জন্য ওযূ করা সুন্নাত। ঘুমানোর পূর্বে এবং ঘুম থেকে উঠার পর অযূ করা মোস্তাহাব। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার অথবা উঠানোর পর, স্ত্রী সহবাসের পূর্বে, ক্রোধান্বিত অবস্থায়, মুখস্থ ক্বোরআন পাঠ করার জন্য, হাদীস বা দ্বীনী ইল্‌ম শিক্ষা গ্রহণ বা শিক্ষা প্রদানের জন্য, ধর্মীয় কিতাব স্পর্শ করার জন্য, (ঘটনাচক্রে) মিথ্যা বলার পর, গালি দেওয়ার পর, মুখে খারাপ শব্দ বের হওয়ার পর, বিধর্মীদের শরীরের সাথে স্পর্শ হওয়ার পর, গীবত করার পর এবং অট্টহাসির পর ওযূ করা মুস্তাহাব। একবার ওযূ ভঙ্গ হলে পুনরায় ওযূ করে নেওয়া মোস্তাহাব।

কুরআন শিক্ষা ও আরবী উচ্চারণ

মহান আল্লাহ তা'য়ালার মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মাজীদকে সর্বস্তরের মুসলমান তথা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও আধুনিক শিক্ষিত কর্মজীবি ও বয়স্ক ভাই বোনদেরকে প্রাথমিক ভাবে বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা ও দৈনন্দিন আমলের প্রয়োজনীয় সূরা-ক্বিরাত, দু'য়া, হাদীস, মাসআলা-মাসাঈল অর্থসহ শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইসলামী জীবন পরিচালনার ব্যবস্থা করে মহান আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন এর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কুরআন শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে নিচের হলুদ বাটনে ক্লিক করুন।

কুরআন শিক্ষা ও আরবী উচ্চারণ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিবরণ ও নিয়্যত

এখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিবরণ ও নিয়্যত দেওয়া হয়েছে।

ফজরের নামাযঃ ফজরের নামায চার রাক'আত। দুই রাক'আত সুন্নত এবং দুই রাক'আত ফরয।

যোহরের নামাযঃ যোহরের নামায ১২ রাক'আত। চার রাক'আত সুন্নাত, চার রাক'আত ফরয, দুই রাক'আত সুন্নাত ও দুই রাক'আত নফল।

আসরের নামাযঃ আসরের নামায আট রাক'আত। চার রাক'আত সুন্নাত ও চার রাক'আত ফরয।

মাগরিবের নামাযঃ মাগরিবের নামায সাত রাক'আত। তিন রাক'আত ফরয, দুই রাক'আত সুন্নাত এবং দুই রাক'আত নফল।

এশার নামায (বিতর সহ) এশার নামায ১৭ রাক'আত। চার রাক'আত সুন্নাত, চার রাক'আত ফরয, দুই রাক'আত সুন্নাত ও দুই রাক'আত নফল। তারপর তিন রাক'আত বিতর ও দুই রাক'আত শফিউল বিতর (নফল)।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিবরণ ও নিয়্যত পড়তে এখানে ক্লিক করুন

নামাযের ওয়াক্তসমূহ কি কি?

আমরা এখানে জানবো নামাযের ওয়াক্তসমূহ কি কি। দৈনিক পাঁচবার নামায পড়া ফরয। এ নামাযের জন্য শরীয়তের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত আছে। যথাঃ ১. ফজর, ২. যোহর, ৩. আসর, ৪. মাগরিব ও ৫. এশা।

নামাযের ওয়াক্তসমূহ কি কি? বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

গোসলের বিবরণ- গোসল কত প্রকার ও কি কি

গোসল কত প্রকার ও কি কি, গোসল ফরজ হওয়ার কারণ কি, গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণ কি, সুন্নাত গোসল কি, মুস্তাহাব গোসল কি, গোসলের ফরয কয়টি, গোসলের সুন্নাত কয়টি, গোসলের মুস্তাহাব কয়টি, গোসলের নিয়ত কি, গোসলের নিয়ম কি পড়তে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।

গোসল কত প্রকার ও কি কি এখানে পড়ুন

তায়াম্মুম কি? তায়াম্মুম এর বিবরণ

তায়াম্মুম কি, তায়াম্মুম এর বিবরণ, কি কি কারণে তায়াম্মুম করা যায়, তায়াম্মুম এর ফরয কি, তায়াম্মুম এর সুন্নাত কি, তায়াম্মুম এর নিয়ত কি, তায়াম্মুম করার নিয়ম কি, কি কি কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয় পড়তে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।

তায়াম্মুম কি? তায়াম্মুম এর বিবরণ এখানে পড়ুন